পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ বন বিভাগের শুভলং রেঞ্জে চলছে হরিলুট। এই রেঞ্জের দায়িত্বে নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার আবু সুফিয়ান মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ভুয়া ও কাল্পনিক জোত পারমিট ইস্যু অব্যাহত রাখার কারণে পার্শ্ববর্তী আলীখিয়াং, শুভলং, রাইখিয়াং রিজার্ভ ফরেস্ট বৃক্ষ শূন্য হবার উপক্রম হলেও দেখার কেউ নেই। প্রতি মাসেই এই রেঞ্জ অফিস থেকে ৮/১০ টি জোত পারমিটের অনুবলে ৩০/৪০ হাজার ঘনফুট কাঠ পাচারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। জোতে ১০টা গাছ থাকলে রিজাভ ফরেস্ট থেকে কাটা হচ্ছে ৫০ টি গাছ। এভাবে রিজাভ ফরেস্ট থেকে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে অচিরেই উল্লেখিত রিজাভ ফরেস্ট সমূহ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে শুভলং রেঞ্জ থেকে যেসব জোত পারমিট ইস্যু হয় তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও ভুয়া। ইস্যুকৃত জোট পারমিটের ভূমির অবস্থানে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে গাছের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। কারণ যেখানে গাছ দেখানো হচ্ছে সেখানে প্রকৃত অর্থে কোন গাছ থাকেনা। ইস্যুকৃত পারমিটে বর্ণিত গাছ রিজার্ভ ফরেস্ট এবং বিভিন্ন লোকের বাড়ি থেকে সংগৃহীত। যা বনজ দ্রব্য পরিবহন নীতিমালার পরিপন্থি। এসব অবৈধকাজ প্রতি মোটা অংকের অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন চালিয়ে যাচ্ছেন শুভলং ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা।
স্থানীয় সেনাবাহিনী সোর্সের মাধ্যমে খবর পেলেই শুভলং রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তার সহযোগীদের সহায়তাই পাচারকালে কাঠ জব্দ করে থাকেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাঠ ভর্তি ট্রাক ও মজুদ অবৈধ কাঠ সেনা বাহিনী আটক করে। এতদসংক্রান্ত সম্প্রতি ৩টি মামলাও হয়। এত অনিয়ম ধরা পড়ার পরও শুভলং রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান ফরেস্টার রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার কৃত দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন শাস্তি হচ্ছে না। সুত্রমতে রাঙ্গামাটি জেলার অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অন্তর্গত রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার আবু সুফিয়ান প্রায় ৫ বৎসর কাল একই বন বিভাগে কর্মরত আছেন। যদিও পরিবেশ বন মন্ত্রণালয়ের বদলি নিয়োগ নীতিমালা ২০০৪ এ স্পষ্টভাবে বলা আছে এক বন বিভাগ থেকে অন্য বন বিভাগে ২ বছর পর পর বদলি যোগ্য। কিন্তু এই ফরেস্টার একই বিভাগে দীর্ঘ ৫ বছর প্রায় রয়ে গেছেন তার অন্য বিভাগে কোন বদলি নেই। কোন ক্ষমতা বলে এবং কিসের জোরে তিনি একই বন বিভাগে বদলি নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে টিকে আছেন তা নিয়ে বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
ফরেস্টার সুফিয়ান শুভলং রেঞ্জের দায়িত্বে থেকে প্রতিনিয়ত ভুয়া ও কাল্পনিক জোত পারমিট ইস্যু করে চলেছেন। সেই সব জোত পারমিটের অনুবলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন আলীখিয়াং, ফারুয়া ও রাংইখিয়াং রিজার্ভ শুভলং রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ নিত্যদিন পাচার হয়ে চলছে। শুভলং রেঞ্জ হতে যে সব জোত পারমিট ইস্যু হয় তা যদি সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয় তাহলে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ হবে যে প্রদত্ত জোত পারমিট এর জায়গায় মূলত কোনো গাছ নেই। ঐ পারমিট মূলে যে গাছ পাচার হচ্ছে তা সবই রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ।
ইতোমধ্যে রিজাভ ফরেস্ট বৃক্ষশূন্য হতে চলছে। এতদসংক্রান্ত ফরেস্টার আবু সুফিয়ানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগে তিনি প্রায় ৪ বছর ধরে নিয়োজিত আছেন। তিনি প্রধান বন সংরক্ষক মো: আমির হোসেন চৌধুরীর আপন লোক। তার সাথে তিনি সুন্দরবনের চাকরি করেছেন। তাছাড়া তিনি একজন সাংবাদিকের ভাগ্নে বলেই ড্যামকেয়ার ভাব প্রদর্শন করেন। জানা যায় বন বিভাগে চাকুরীর সুবাদে এই ফরেস্টার অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। বারশাল শহরের আলেকান্দায় রয়েছে তার বিলাশবহুল বাড়ী। রাজধানী ঢাকায় ফ্ল্যাট, বরিশালের বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় স্ত্রীসহ আপনজনদের নামে বেনামী অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা রয়েছে বলেও তার সাথে কর্মরত জনৈক ফরেস্টার জানান।