রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

আমার মা, আমার অহংকার- মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৮২৩ পাঠক পড়েছে

রাজিয়া বারিক গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া এতিমখানা সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কারিগর, শিক্ষানুরাগী, সমাজের অবহেলিত শিশু কিশোরদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, পরিশ্রম করছেন নিরন্তর। মহীয়সী, শান্ত, স্নিগ্ধ ব্যাক্তিত্ব,তাঁর অনন্য কর্ম দক্ষতা, অপূর্ব সৃষ্টিই তাকে সৃজনশীল কর্মী হিসেবে নিজস্ব বলয়ে চিহ্নিত করেছেন – পরম শ্রদ্ধেয় রাজিয়া বেগম, আমার – মা, আমার অহংকার।১৮ ভাদ্র আজ তাঁর শুভ জন্মদিন। ৮১ তম জন্মদিন। পা রাখলেন ৮১ বছরে।

শান্ত নিবিষ্টচিত্ত এবং সুনির্দিষ্ট চিন্তা ধারার মানুষ। ধরনীর বুকে ফুটে উঠা অনন্য ফুল,অতুলনীয় বর্ন-গন্ধে, নিষ্টাবান বুদ্ধিদীপ্ত, প্রজ্ঞায় অমলিন মমতাময়ী, জনসেবা মূলক কর্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এবং থাকবে। সমাজের কল্যানে অবহেলিত শিশু কিশোরদের সুন্দর জীবন গঠনে কাজ করছেন এ বৃদ্ধ বয়সে। হৃদয়ে হৃদয় মিশিয়ে ভালবাসছেন অনাথ এতিমদের। তাঁর নেই কোন ক্লান্তি।কুমিল্লা জেলাস্থ চান্দিনা উপজেলার মধ্যমতলা অজপাড়া গাঁয়ে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলনে তাঁর অবিরাম প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান উজ্জ্বল প্রদীপ শিখার মতো জ্বলছে।

সুন্দর সুনিবীর পরিবেশ যা যে কারোরই মন কেড়ে নেয়- রাজিয়া বারিক গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসা-ই-রাজিয়া বারিক গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া। লেখা পড়ার ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি না থাকলেও শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলনে অবিরাম প্রচেষ্টা সত্যি সত্যিই অবাক করার মতো। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অসুস্থতা কোন কিছুই তাঁর এগিয়ে চলার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। এতিম শিশু কিশোরদের মাঝে মমতাময়ী মা হয়ে মিশে যাওয়ায় যে অদম্য স্পৃহা দেখে উজ্জীবিত হই আমরাও। এক সময় সন্তানদের নিয়ে ভাবতেন, স্বপ্ন দেখতেন। সে ভাবনা এবং স্বপ্ন আজ যেন অনাথ এতিম অসহায়দের সাথে মিশে বড় স্বপ্নের জাল বুনেছেন।

এতিমখানার নিবাসীদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্র এবং হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্নে বিভোর। এতো উদার, সহিষ্ণু অন্তরিত মায়াময়, ভালো মনের মানুষ আজ কমই মিলে। শিক্ষা বিস্তারে নিজের বসত ভিটা সহ সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার নজির খুব একটা দেখা যায় না। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত, ছোট খাট মানুষ, মুখবয়বে সদা মিষ্টি হাসির ঝলক লেগেই থাকে। শত ঝঞ্ঝার মাঝেও কুঞ্চিত হতে দেখিনি কপালের বলিরেখা। শান্ত বিমহিত নীরব কর্মী,অভূত ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি। মিষ্টি ভাষী, বিদূষী, মেধাদীপ্ত, মহীয়সী-মা। তাঁর অপার্থিব স্নেহ ধারায় আপ্লত, সমৃদ্ধ।

সন্তান হিসেবে আমরা, গৌরবান্বিত। আমাদের প্রতি অগাধ কর্তব্য বোধ ও নিষ্টা ভালোবাসা আমাদের মাথা উঁচু করে দাড়াতে শিখিয়েছেন। তিনি আগা গোড়াই একজন সমাজ ঘনিষ্ট মানুষ। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ব্যাক্তি স্বার্থ-উপেক্ষা করে মানব সেবার মনোভাব দিন দিন ক্ষয়িষ্ণু। মানব কল্যানে মানুষের উদারতা, নিবেদিত প্রান প্রায়-ই অনুপস্থিত বললেই চলে। অবহেলিত,অসহায় এতিম পশ্চাদপদ শিশু কিশোরদের আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে অগ্রগতির সোপান রচনার চিন্তক ও নিবেদিত প্রাণ মানুষের অপ্রতুলতার মাঝেও নিজের সন্তানদের সম্পৃক্ত করে আলোর মিছিলে একীভূত হয়ে প্রদীপ শিখা প্রজ্জ্বলন করে পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নেয়ার যে প্রচেষ্টা সত্যিই তাকে জগত ক্ষ্যাত করে রাখবে।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাই নয়, উন্নয়ন,গ্রন্থাগার ও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততার মেল বন্ধন তৈরীর বলিষ্ট ভূমিকার জন্য সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন এবং থাকবেন। তাঁর স্বপ্ন – কর্মই জীবন, কর্মই ধর্ম।এ চিরসত্য যে নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর হয়ে বেঁচে থাকা যায় কর্মের মাধ্যমেই। নানা প্রতিকুলতার মাঝেও এগিয়ে যাচ্ছেন। বই পড়া তাঁর অন্যতম নেশা। অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এতিমখানার সভাপতি হিসেবে সকল প্রকার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এতিমখানার নিবাসীদের খাওয়া-দাওয়া,লেখাপড়া সহ সকল কিছুই দেখাশুনা করে থাকেন। তারপরও এ গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পাঠ অভ্যাস আজো তাঁর রয়েই গেছে। সামান্য সুযোগ পেলেই বসে যান বই নিয়ে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ শেষে নির্ধারিত অজিফা পাঠের পর পত্র পত্রিকা নিয়ে বসেন। তারপর ধর্মীয় ও অন্যান্য গ্রন্থ পাঠ নিয়মিতভাবে করে যাওয়াই প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। সকল লোভ লালশার উর্দ্ধে থেকে জন কল্যাণে,শিক্ষার আলো বিস্তারে নিরন্তর শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন সত্যিই তা অবাক করার মতো। ঈর্ষনীয় খ্যাতি রয়েছে অতিথিপরায়ণ হিসেবে। পারিবারিক ঐতিহ্যে পাওয়া গুনগুলো নিজের জীবনে প্রতিফলনের কারনে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন সকলের কাছে। যেসকল সামাজিক কার্যক্রম করে যাচ্ছেন তাঁর কিছু হলো- গরীব ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান। দাতা সদস্য ( জমি অনুদানের মাধ্যমে) খিরাসার মোহনপুর দাখিল মাদ্রাসা, আকবরিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসা,মাদ্রাসা-ই-রাজিয়া বারিক গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া এতিমখানা, খানকা-ই-রেজভীয়া, গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া শাহী ঈদগাহ, মসজিদ-ই- রাজিয়া বারিক গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া, রাজিয়া বারিক গাউসিয়া রেজভীয়া সুন্নিয়া এতিমখানা। জীবন সদস্য শান্তি ক্যান্সার ফাউন্ডেশন,ঢাকা,আনজুমান-এ-ফয়জুর রাসুল রেজভীয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট।

প্রতিষ্ঠাতাঃ আব্দুল বারিক ভুঁইয়া স্মৃতি পাঠাগার সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত। রয়েছে গ্রন্থ প্রকাশনাও। যেগুলোর রয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা।তা হলো সৃষ্টির মূল নূর-ই-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম (১৯৯৯),নারী জাতির সম্মানে সুরাতুন নিসা (২০১০),সিরাজাম মুনিরা (২০০৭),শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলা হযরত আল্লামা রেজভী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ( ২০১৬)।পরিশেষে দীর্ঘ ও সুন্দর জীবন কামনা করছি। আর বেঁচে থাকুক কর্মের মধ্যে অনাদিকাল। (লেখক- সাবেক সরকারী কর্মকর্তা, কবি, প্রাবন্ধিক জীবন সদস্য, বাংলা একাডেমি)।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580