শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সংবাদ পড়তে এখন থেকে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট www.dailyajkersangbad.com ভিজিট করুন। টাংগাইল বন বিভাগের দোখলা সদর বন বীটে সুফল প্রকল্পে হরিলুট আগ্রাবাদ ফরেস্ট কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী ফৌজদারহাট বিট কাম চেক স্টেশন এর নির্মানাধীন অফিসের চলমান কাজ পরিদর্শন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে: শেখ সেলিম সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চলছে সীমাহীন অনিয়ম এলজিইডির কুমিল্লা জেলা প্রকল্পের পিডি শরীফ হোসেনের অনিয়ম যুবলীগে পদ পেতে উপঢৌকন দিতে হবে না: পরশ নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়, পেশি শক্তির মানসিকতা পরিহার করতে হবে: সিইসি

ভিক্টিম ব্লেমিং ও আমজনতার বিচার সংস্কৃতি-মো:আসিফ উল হক

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৬৬৫ পাঠক পড়েছে

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একে অপরের প্রতি সত্যিকার দরদ এবং ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হোক এটা মনে প্রাণে সকলেই চায়। এমনকি এই ব্যাপারে কারো কোন প্রকার দ্বিধা বা সন্দেহের অবকাশও নেই। তবে প্রশ্ন থেকে যায় এই দরদ বা মমতা দেখাতে যেয়ে আমরা অন্যায়ভাবে কাউকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি কিনা, যিনি যেই কাজটি করেননি বরং অহেতুক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাকে আমরা সেই কাজটির জন্য দোষারোপ করছি কিনা। যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে বুঝতে হবে আমরা কাজটি সঠিক করছি না। কেননা ভুক্তভোগীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা মানেই পরোক্ষভাবে অপরাধীকে বাচানোর কূটকৌশল। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়, মারাত্মক অপরাধও বটে।তাই কোনো অপরাধের জন্য কাউকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করার আগে সেদিকে আমাদের যত্নশীল হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।

আমরা সাধারণ মানুষ নিজেদেরকে অতিরিক্ত বুদ্ধিমান মনে করি এবং সেই সাথে হরহামেশায় আমরা নিজেদের অভিব্যক্তি দিয়ে অন্যের অনুভূতিতে অযাচিত র্স্পশ করতে চাই। বর্তমান সময়ে আমাদের মত প্রকাশের বিষয়টা খুবই চিন্তার খোরাক জন্ম দিচ্ছে। বির্চায বিষয়ে সাধারণত যে মনোভাব প্রকাশিত হচ্ছে এতে করে বিচারহীনতা বা ন্যায্য দাবি যাই বলিনা কেন তা কোনো ভাবেই আমাদের জন্য সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ব্যতিত মঙ্গলজনক কোন পন্থা হয়ে উঠছে না। আমরা সমালোচনা করতে যেয়ে বিভিন্ন ভাবে অন্যকে জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে মানহানিকর পরিস্থিতিতে উপনিত করছি। এতে করে ভুক্তভোগীর সামাজকি মর্যাদা মান সম্মান সবকিছুই আমাদের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভিক্টিম ব্লেমিং কোন বালিশ বদল বা চেয়ার সিটিং খেলা নয় তবুও অমরা ভিক্টিমকেই অনেক সময় দায়ী বা দোষারোপ করছি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জন্য। ন্যায় সঙ্গত বিচারের আগেই অভিযুক্তের পাশাপাশি ভুক্তভোগীও বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে আম জনতার, পেষ্টর্মটেম করা হচ্ছে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের। এতে করে আমরা পরোক্ষ ভাবে অন্যায়টাকে প্রধান্য না দিয়ে প্রধান্য দিচ্ছি ঘটনায় ভিক্টিমের কি দোষ তার উপর। ভুক্তভোগী কেন গেলো? কেন করলো? এসব প্রশ্ন বানেই জর্জরিত আমাদের চিন্তা গুলো।

ভিক্টিম ব্লেমিং শব্দটি পৃথিবী ব্যাপি বহুল প্রচলিত। ভিক্টিম ব্লেমিং একটি ইংরেজী শব্দ যার আবিধানিক অর্থ ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা। অর্থাৎ কোন অন্যায় সংঘটিত হলে যে ব্যক্তি ভুক্তভোগী তাকেই পরোক্ষ ভাবে দোষারোপ করা। বিশেষ করে ভিক্টিম ব্লেমিং এর সংস্কৃতিটা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে মোটামুটি ভালোভাবেই চর্চা করে থাকি আমরা যা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের চিন্তার জায়গা থেকে যেখানে আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা টা জরুরী সেখানে অতিরঞ্জিত বক্তব্য প্রদান বা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে মস্তিক নিসৃত চিন্তা গুলো তুলে ধরছি যার বেশির ভাগই ব্লেমিং করা হচ্ছে ভুক্তভোগীকে কেন্দ্র করে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বেশকিছু ঘটনার সর্ম্পকে আমরা জানি যেখানে অপরাধীর চেয়ে ভিক্টিমকেই বেশি দোষারোপ করা হয়েছে, করা হচ্ছে। সিলেটের এমসি কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শীক্ষার্থী ধর্ষণের কথা বলতে পারি। অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুক্তভোগীদেরকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে দোষারোপ করা হয়েছে। তারা সেখানে কেন গিয়েছিল ? কেন এমন পোশাক পড়েছিল? কেন একটা মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়েছিল এমন অনেক অর্থহীন প্রশ্ন। কথা বলার হাবভাব এমন যেন সংগঠিত অপরাধটির জন্য ভুক্তভোগীও সমানভাবে দায়ী, অপরাধীর সাথে তারও বিচার হওয়া উচিত। প্রতিনিয়ত আমরা এভাবেই ভিক্টিমকে দোষারোপ করছি। আমজনতার এমন ব্যবহারে ভুক্তভোগীদের মধ্যে যিনি মারা যাচ্ছে তিনি এক বুক আর্তনাদ নিয়ে চলে যাচ্ছেন, আর যিনি বেঁচে থাকেন তিনি বয়ে বেড়ান এক বৃহৎ যন্ত্রণা যা বুঝবার সাধ্য আমাদের কারো নেই। আমরা কি নোয়াখালির যৌন নিপীড়ন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ভিডিওটির কথা ভুলে গেছি? এই ঘটনায়ও ভিক্টিমকেই দায়ী করা হয়েছিল, বলা হয়েছিল ভুক্তভোগী কেন থানায় অভিযোগ করে নি? কী অবান্তর প্রশ্ন! শুধু উপরোল্লিখিত ৩ টি ঘটনা নয়, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় এভাবেই ভুক্তভোগীকে দোষী সাবস্ত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের ভূমিকাটা কি হওয়া উচিত কখনো কি তা ভেবে দেখেছি? হয়ত না। যদি ভাবতাম তাহলে এভাবে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করতাম না। যদিও ভিক্টিম ব্লেমিং রুখতে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে এটাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। এমনকি দন্ডবিধিতেও কোন ধারায় দন্ডের কথা বলা হয়নি। আইনের মারপ্যাচে অপরাধ না হলেও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই কাজটি একটি চরম অন্যায় এবং ভুক্তভোগীর জন্য চূড়ান্ত অপমান ও মানহানিকর।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ধারা ১৪ তে সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় না প্রকাশ করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। উক্ত আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে এই আইনের বর্ণিত অপরাধের শিকার হয়েছেন এরুপ নারী ও শিশুর ব্যাপারে সংঘঠিত অপরাধ বা তৎ সম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোন সংবাদ পত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমন ভাবে প্রকাশ বা উপস্থাপন করা যাবে না যাতে করে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ পায়। যদি উক্ত বিধান কেউ লংঘন করে তবে উক্ত কাজের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা তবে ভিক্টিমের পরিচয়কে বিশেষ করে নারী ও শিশুদেরকে সংবাদ মাধ্যমে উপস্থাপন না করার জন্য বিশেষ বাধানিষেধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকে দুই বৎসরের কারাদন্ডে বা অনূর্ধ এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডনীত হবেন। অথচ আমরা হরহামেশায় বিভিন্ন অভিপ্রেত কথাবার্তা বা বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে লেখনির মাধ্যমে ভুক্তভোগীর নিন্দাবাদ প্রকাশ করছি। যা ভুক্তভোগীসহ অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও অধিকাংশ সময় মানহানি করছে। আমাদের একটা বিষয়ে সুস্পষ্ঠরুপে ধারণা রাখতে হবে কোন অপরাধে কাউকে অভিযুক্ত করা মানে এই নয় যে তিনি প্রকৃত অপরাধী। আইনে বলা হয়েছে প্রাথমিক দৃষ্টিতে প্রত্যেক অপরাধীই নিষ্পাপ। একবার চিন্তা করুন। যেখানে অপরাধ প্রামাণিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীকেও অপরাধী বলতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে আপনি কিভাবে ভুক্তভোগীকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন!

ভিক্টিম ব্লেমিং এর ক্ষেত্রে আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিক্টিমকে বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন যৌন নিপীড়ন বা শীলতাহানির শিকার তাদেরকে আমাদের কর্ম, কথা বা লেখনীর মাধ্যমে অপমান অপদস্ত করে থাকি। যা প্রকৃত অর্থে দন্ডনীয় অপরাধ। দন্ডবিধি ৪৯৯ ধারা এবং কিছু ক্ষেত্রে ধারা ৫০৯ এর অধীনে কৃত কাজটি অপরাধ। এর জন্য দোষী ব্যক্তি দন্ডবিধির ৫০০ ধারা মোতাবেক দুই বৎসর মেয়াদের কারাদন্ড বা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। যদি অপরাধটি সংঘঠিত করা হয় কেবল নারীর শীলতাহানির উদ্দ্যেশে তবে সেক্ষেত্রে অপরাধী এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থ দন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। পরিশেষে বলতে চাই আমাদের উচিত চিন্তা বা কর্মে সৃজনশীলতা ধরে রাখা। না জেনে কোন বিষয়ে অহেতুক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। একটা অপরাধের বিচার চাইতে যেয়ে যেন কোন ভাবেই ভিক্টিম সমাজের চোখে অপরাধী না হয়ে উঠে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রার্থনা যেন ভৎসনা না হয়ে ওঠে

চিন্তার খোরাকে যেন থাকে পূর্ণতা

যে আমি দন্ডিত নই

সে আমি প্রকাশ্যে।

লেখক : আইনের শিক্ষক, বিইউবিটি

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580