রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

যৌনতা ব্যাবস্থাপনাঃ পাঠ্যক্রমে যৌন শিক্ষা- শাহিদা খাতুন

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২১০৫ পাঠক পড়েছে

ক’দিন ধরে চোখ রাখছিলাম বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হোন তাদের ফেবুওয়াল স্ট্যাটাস, পত্রিকার শিরোনাম ইত্যাদির দিকে। সমাজের অবক্ষয়, পারিবারিক বা ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ইত্যাদি অনেক কিছুই অনেকে বলছিলেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, যেটি সব ইস্যুতেই হয়ে থাকে,আসল কারণ বা কথাটি কেউ বলছেন না। সেটা হলো ” যৌন শিক্ষা ” হ্যা ঠিকই শুনেছেন। আমি শিক্ষা  ব্যবস্থায় যৌন  শিক্ষার প্রচলন এর কথায় বলছি।

মিশেল ফুকোর মতে যৌনতা হচ্ছে “যৌনকর্মের শৃঙ্খলা, যৌনকর্মের নিয়মাবলী,যৌনকর্ম নিয়ে গড়ে ওঠা মতবাদ ও অভিমতসমুহ ইত্যাদি। ” তাঁর মতে যৌনতার উদ্দেশ্য দুটিঃ

১. আনন্দানুভুতি দেওয়া

২.  প্রজাতির উৎপত্তি নিশ্চিত করা

আমি মনে করি যৌনতার আরও একটি প্রচ্ছন্ন উৎপাদ রয়েছে। আর তা হচ্ছে “পীড়ন”।  আমরা যদি  আমাদের দেশের গত কয়েক বছরের ও বর্তমান সময়ের

পত্রিকার পাতা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। প্রাচ্যের দেশগুলোর প্রায় সবগুলোরই একই অবস্থা। বর্তমানে দিহান কান্ড তো সবারই ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে। সমাজের একটা বড় অংশ সংশ্লিষ্ট মেয়েটির উপর দোষ চাপাতে চাইছেন যেহেতু তিনি বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে যুক্ত হয়েছেন। ঘটনার আদ্যোপান্ত যাইহোক না কেনো আমি সেদিকে যাবো না। আমি বলতে চাইছি এখানে “পীড়ন ” হয়েছে। বিয়ের মাধ্যমে বৈধতা প্রাপ্ত সম্পর্কেও তা ঘটে থাকে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য গত ২৭শে অক্টোবর ২০২০ এর ঘটনাটির “টাঙ্গাইলে নূর নাহার নামে ১৪ বছরের কিশোরীর বিয়ে হয়েছিলো বিদেশফের ত ৩৫ বছরের একজনের সঙ্গে।বিয়ের পর শারীরিক সম্পর্কের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে টানা ৩৪ দিন যন্ত্রণা সহ্য করে অবশেষে মারা যায় হতভাগী মেয়েটি।” গত ২৯শে অক্টোবর ২০২০ এ প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক কলামে গবেষক জোবাইদা নাসরীন  লিখেছেন, ‘…উত্তরবঙ্গের চারটি জেলার আটটি উপজেলায় গবেষণাকাজ করতে গিয়ে সেটাই দেখছি। নূর নাহারের মতো অনেক মেয়ের সঙ্গেই সেখানে কথা হয়েছে, যাদের বয়স এখন ১৬–১৭। তাদের বিয়েও হয়েছে দু–তিন বছর আগে। তাদেরও বিয়ের পর অনেক রক্ষক্ষরণ হয়েছে। তবে তাদের ভাগ্য হয়তো কিছুটা ভালো, তারা বেঁচে আছে এখনো’। (জোবাইদা নাসরীন, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।

সুতরাং বৈধ, অবৈধ যেভাবেই ঘটুক না কেনো এখানে রাষ্ট্রের একটা উদ্বেগের জায়গা আছে। জ্ঞানতায় বা অজ্ঞানতায়, চেতনায় বা অচেতনায় ,যেভাবেই পীড়ন ঘটুক না কেনো, রাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন হতে হবে। কেননা, এধরণের পরিস্থিতিতে পড়ে যখন কোনো পরিবারের সন্তান মারা যায় তখন পুরো পরিবার সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

যৌনতার উপরেল্লেখিত দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি(প্রজাতির উৎপত্তি) সরাসরি রাষ্ট্রের জনমিতির সাথে জড়িত । একটি সুষম যৌনতা নির্ভর সমাজ উৎকৃষ্ট মানবসম্পদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। কারণ, শিশুর শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশে সুস্থ যৌনতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং রাষ্ট্রেকে “যৌনতা ব্যবস্থাপনা” য় অনেক বেশি  প্রাধান্য দিতে হবে এবং সক্রিয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে । সেক্ষেত্রে মনে হতে পারে রাষ্ট্র কি আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণ করবে? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কিভাবে রাষ্ট্র যৌনতার মতো বিষয় “ব্যবস্থাপনা” করবে?

রাষ্ট্র এমনভাবে তার মানবসম্পদ তৈরি বা বিকশিত করবে যে প্রতিটি নাগরিক নিজেই তার নিজের ব্যবস্থাপক হয়ে উঠবে। আর তা সম্ভব হবে একটা সুপরিকল্পিত যৌনশিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে। আমি মনে করি কিশোর- কিশোরীদের যৌনশিক্ষা সিলেবাসে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই সংযুক্ত করা দরকার।যেমনঃ

১. যৌনকর্ম কি?

২. যৌনতা কি এর উদ্দেশ্য কি?

৩. যৌনাঙ্গ কোনগুলো?

৪. যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক গঠন

৫. যৌনাঙ্গের অস্বাভাবিক গঠন নির্ভর রোগসমুহ

৬. যৌনতার নিয়ম ও রীতি পদ্ধতি

৭. যৌনকর্মের স্বাভাবিক বা সঠিক বয়স

৮. যৌনকর্মের সঠিক বা নিরাপদ পদ্ধতি

৯. অপরিণত বয়সে যৌন কর্মের বিপদ সমুহ

১০. সেক্সটয় বা যৌনকর্ম সহায়ক খেলনা ব্যবহার এর     উপকারিতা,অপকারিতা ও ঝুঁকিসমুহ

১১. যৌনকর্ম কেনো ও কিভাবে যৌন নিপীড়ন হয়ে যায়?

১২. অনিরাপদ যৌনকর্মের ঝুঁকিসমুহ

১৩. যৌনতানির্ভর রোগসমুহঃ

১৪. যৌনতা বিকার কি? পরিহারে করণীয় কি-

১৫. .XXX সিনেমা ফ্যান্টাসি ও বাস্তবতাঃ

১৬. যৌন নিপীড়ন কি?

১৭. যৌন নিপীড়ন এর শাস্তি সমুহ

১৮. প্রজনন এর দায়িত্ব ও কর্তব্য

১৯. যৌনতা ও প্রজনন স্বাস্থে মাদকের বিরুপতা

এগুলো কয়েকটি নমুনা মাত্র। দেশের বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ,মনোরোগ বিশেষজ্ঞ , যৌন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এই পাঠ্যক্রম তৈরি করা যেতে পারে। পাঠের বিষয়বস্তু খুব সহজ ও নির্মল ভাষায় লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাসঙ্গিক জায়গায় উপযুক্ত চিত্র অবশ্যই দিতে হবে। সপ্তম নাকি অষ্টম কোন শ্রেণীতে যথাযথ হবে সেটা উক্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ঠিক করা যেতে পারে।

যখন একজন কিশোর- কিশোরীর যথার্থ ধারণা থাকবে তখন সে তার প্রয়োজনে কিভাবে কি করবে নিজেই বুঝতে পারবে। যদি সে দেখে স্বাভাবিক গঠন থেকে তার যৌনাঙ্গ অস্বাভাবিক সে ডাক্তার দেখাতে পারবে। এভাবেই একটা সুস্থ যৌনতা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়।

আমাদের সমাজে বাবা-মা,ভাই-বোন বা পরিবারের অন্য সদস্যরা সাধারণত কেউই যৌনতা বিষয়ে কোন আলাপচারিতা করতে চান না। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উৎসাহের বুদবুদ ফুটতে থাকে। এখন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার জন্য অনেক কিছুই খুব সহজ প্রাপ্য হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা না বললেও ইন্টারনেট এর বিশ্বদুয়ার থেকে তারা অনেক কিছুই জেনে ও শিখে ফেলে। যেটা শেখে না সেটা হচ্ছে সঠিকতার মাপকাঠি। সুতরাং তারা যৌনবিকারগ্রস্থ অসুস্থ প্রানী হয়ে পড়ছে।এই যৌনবিকার থেকে পুরো প্রজন্মকে রক্ষা করার সব থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে অবিলম্বে যৌনশিক্ষাকে প্রচলিত শিক্ষাক্রমে সংযুক্ত করা।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580